পৃথিবীতে এমন কোন পেশা নেয়, যে পেশায় সুবিধার পাশাপাশি অসুবিধা নেয় আবার অসুবিধা পাশাপাশি সুবিধা নেয়। সব পেশায়ই কম বেশি সুবিধা এবং অসুবিধা থাকে। ঠিক তেমনি নার্সিং পেশায়ও বেশ কিছু সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে। আজকে আমরা সেই বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করার চেষ্টা করব।
নার্সিং পড়ার সুবিধা অসুবিধা:
যারা নার্সিং পড়তে চাচ্ছেন বা পরিবারের কাউকে নার্স বানাবেন ভাবছেন তাদেরকে আবশ্যয় নার্সিং পড়ার অসুবিধা ও সুবিধা সম্পর্কে জানতে হবে। কেননা কেউ যদি আগে থেকেই একটা কাজের ভালো ও খারাপ দিক জানতে পারে, তখন সে আগে থেকেই মানসিক ভাবে প্রস্তুত থাকতে পারে এবং সব ধরনের সমস্যার সমূখিন হতে পারে। এমনকি এই সব বিষয় থেকে তেমন একটা মন খারাপ বা কষ্ট হয় না। তাহলে চলুন যেনে নেওয়া যাক নার্সিং পড়ার সুবিধা অসুবিধা সমূহ-
নার্সিং পড়ার সুবিধা:
নার্সিং পড়ার অনেক সুবিধা রয়েছে। বিশেষ করে মেয়েদের জন্য নার্সিং পড়ার কোন বিকল্প নেয়, কারণ শুধুমাত্র নার্সিং এ ৯০% মেয়ে নিয়োগ করা হয়। নিচে নার্সিং পড়ার কয়য়েকটি সুবিধা তুলে ধরা হলো-
- যে কোন বিভাগ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাশ করে (মোট ৬ পয়েন্ট থাকতে হবে তবে কোন একটাতে ২.৫০ এর কম থাকলে হবে না) নার্সিং পড়া যায়।
- সরকারি নার্সিং কলেজে ভর্তি হতে পারলে পড়ার জন্য তেমন কোন টাকার প্রয়োজন হয় না। ভর্তির সময় এককালীন কিছু টাকা লাগে এরপর আর কোন টাকার প্রয়োজন পড়ে না।
- সরকারি নার্সিং পড়াকালীন সরকার প্রতি মাসে ভাতা প্রদান করেন, যা দিয়ে নিম্ন মধ্যবিত্ত বা মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানদের হাত খরচ হয়ে যায়। বাড়ি থেকে বাড়তি কোন টাকা নিতে হয় না।
- সরকারি, বেসরকারি (সরকার অনুমোদিত) ও স্বায়ত্তশাসিত যেখান থেকেই নার্সিং পাশ করুন না কেন, নার্সিং পাশ করার পর সবাই সমান সুযোগ-সুবিধা পাবেন।
- দেশের ছোট বড় হাসপাতাল, ক্লিনিক বা বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে নার্সদের চাকরির সুযোগ রয়েছে।
- বাংলাদেশ থেকে নার্সিং পাশ করে বা ডিগ্রি নিয়ে বিদেশেও চাকরির বিশেষ সুযোগ রয়েছে (এক্ষেত্রে ইংরেজিতে পারদর্শী হতে হবে)।
- এছাড়া ভালো স্যালারিতে দেশের বিভিন্ন এনজিওতে চাকরির সুযোগ রয়েছে।
- নার্সিং পড়ার পর এখান থেকে উচ্চতর ডিগ্রি গ্রহন করার সুযোগ রয়েছে।
- মন দিয়ে প্রতিদিন ২ ঘন্টা পড়াশোনা করলে খুব সহজেই সরকারি চাকরি পাওয়া যায়।
- উচ্চতর ডিগ্রি গ্রহণ করে পর্যায়ক্রমে নার্সিং ইনচার্জ, সুপারভাইজার, টিচার হওয়ার সুযোগ রয়েছে।
এছাড়াও নার্সিং যেহেতু একটি সেবা মূলক পেশা সেহেতু সঠিক সেবা প্রদান করতে পারলে, সম্মান পাওয়া যায় এবং মানসিক প্রশান্তি মেলে।
নার্সিং পড়ার অসুবিধা:
নার্সিং পড়ার অনেক সুবিধা থাকলেও এর বেশ কিছু অসুবিধাও রয়েছে। তবে নার্সিং পড়ার অসুবিধার থেকে সুবিধায় বেশি। নিচে নার্সিং পড়ার অসুবিধা সমূহ তুলে ধরা হলো-
- নার্সিং যেহেতু ইংলিশ মিডিয়াম যে কারনে যারা বাংলা মিডিয়াম থেকে আসে তাদের জন্য প্রাথমিক ভাবে কিছুটা অসুবিধা সৃষ্টি হতে পারে।
- নার্সিং এর সব সাবজেক্ট গুলো সাইন্সের ফলে যারা আর্টস ও কমার্সের থেকে আসে তাদের জন্য প্রাথমিক ভাবে অসুবিধা সৃষ্টি হতে পারে।
- যারা বেসরকারিতে পড়াশোনা করছেন তাদের অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। কিন্তু অনেক সময় পড়া শেষ করে ১০,০০০ টাকা বেতনে চাকরি করতে হতে পারে। ফলে আর্থিক সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
- আবার যারা নিজের রাগ একদমি কনট্রোল করতে পারেন না, তাদের জন্য নার্সিং পড়া বা নার্সিং এ চাকরি করা বিপদজনক হতে পারে। কেননা এখানে রোগী ও রোগীর পরিবারের সদস্যরা নানা কারণে অকারণে আপনাকে বিরক্ত করতে থাকবে, ফলে রাগ করে তাদের সাথে কথা বলতে পারেন। যেটা নিয়ে আপনার সাথে তাদের জামেলা সৃষ্টি করতে পারে। এমনকি আপনার নামে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে নালিশও করতে পারে। ফলস্বরূপ আপনাকে সমস্যায় পড়তে হবে, আবার চাকরিও চলে যেতে পারে।
- নার্সিং পেশাটা সম্মানের হলেও বেশির ভাগ মানুষ আপনার প্রাপ্য সম্মান আপনাকে দিবে না। বরং খারাপ ব্যবহার করতে পারে।
- অনেক মানুষ তো এটাও জানে না যে নার্সিং এর চাকরি করতে পড়াশুনো করতে হয়। তারা আপনার সামান্য ভূলে অশিক্ষিত মূর্খ্য বলে বকা ঝকা করতে পারে।
- আপনার কোন ভূল না থাকলেও দিন শেষে অনেক রোগীর লোক থেকে শুনতে হবে আপনি ঠিক মত কাজ করেন না বা রোগীর সাথে ভালো ব্যবহার করেন না।
- নার্সিং পেশা ২য় ক্লাস হলেও কিছু মানুষ আপনাকে ৪র্থ ক্লাসের সম্নানও দিবে না।
- এছাড়াও আরো অনেক সমস্যার সমূখিন হতে পারেন। তবে সরকারি জব হলে কিছুটা হলেও প্রশান্তি পাবেন।
আশা করছি উপরের আলোচনা থেকে বুঝতে পেরেছেন নার্সিং পড়ার অসুবিধা গুলো কি বা কি কি সমস্যার সমূখিন হতে হবে আপনাকে। তবে আপনি যদি ধৈর্য সহকারে নিজের কাজ মন দিয়ে করতে পারেন তাহলে মানুষের কাছে না হলেও মহান সৃষ্টিকর্তার প্রিয় পাত্র হতে পারবেন।
নার্সিং পেশার গুরুত্ব
নার্সিং পেশার গুরুত্ব বলে শেষ করা সম্ভব নয়। তবে, আমাদের দেশে নার্সিং পেশাকে তেমন একটা সম্মানের চোখে দেখা হয় না। কিন্তু বাহিরের কান্ট্রিতে নার্সদের অনেক সম্মান করা হয়। অনেকেই বুঝে না যে, দেশে যদি নার্সিং পেশা না থাকতো তাহলে কারা তাদের প্রিয় মানুষটাকে সেবা করে সুস্থ করে তুলতো। যখন কেউ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে দিনের দিনের পর দিন ভর্তি থাকে তখন তার একমাত্র ভরসা থাকে একজন নার্স।
শিক্ষা যেমন একটি জাতির মেরুদন্ড। ঠিক তেমনি নার্স স্বাস্থ্যসেবা খতের মেরুদণ্ড। একজন নার্স কখনো নিজের কথা ভাবেন না, শুধুমাত্র অসুস্থ রোগীর কথা ভাবেন। একজন রোগীর রোগ চিকিৎসা বা ওষুধে যতটা না সুস্থ হয়, তার থেকে বেশি সুস্থ হয় নার্সদের সহানুভূতি ও সেবা পেয়ে। ডাক্তার একজন ভর্তি রোগীর কাছে দিনে একবার বড়জোর দুইবার আসেন আর নার্স দিন রাত ২৪ ঘন্টা তার পাশে থাকে তার কথা শুনেন। তাহলে একজন অসুস্থ রোগীকে দ্রুত সুস্থ করার পিছনে কার অবদান বেশি? এখন অনেকেই বলবেন ডাক্তার মেডিসিন না লিখে দিলে একজন নার্স কি করতে পারে? আবশ্যয় ডাক্তার আর নার্স একে অপরের পরিপূরক একজন নার্স বা একজন নার্স কেউই একা পরিপূর্ন সেবা প্রদান করতে পারেন না। তবে সেবার ক্ষেত্রে নার্স এই এগিয়ে রয়েছে এটা মানতেই হবে।
নার্সরা অসুস্থ, আহত ও বয়স্ক মানুষের মনে আশা ও ভরসা জোগায়। একজন ডাক্তার রোগীর রোগ নির্ণয় করেন এবং সারিয়ে তোলার জন্য ওষুধ লিখে দেন এবং একজন নার্স সেই ওষুধ গুলো সঠিক সময় প্রয়োগ করেন। নার্সরা রোগীদের ভালো মন্দ দেখাশোনা করেন। তারা রোগীকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে ভেঙে পড়া থেকে এবং মনকে শক্ত রাখতে উৎসাহিত করেন। যেসব রোগীদের দীর্ঘস্থায়ী রোগ হয় বা খুব শীঘ্রই মারা যাবে এমন রোগীকে মায়ের মত স্নেহ ও ভালোবাসা দেন। যেসব রোগীদের কাছে তার পরিবারের প্রিয় মানুষরা আসতে ভয় পায় বা ঘৃনায় মূখ ফিরিয়ে নেন, সেই সব রোগীদেরকেও খুব যন্তের সাথে সেবা প্রদান করেন নার্সরা।
বর্তমানে সারা বিশ্বে নার্সিং পেশার গুরুত্ব দিন দিন বেড়েই চলছে। চলতি বছরে আমাদের দেশ থেকে বাহিরের দেশে অনেক নার্স নেওয়া হয়েছে। সেই সব দেশ থেকে আরো নার্স নিবেন বলে জানিয়েছেন। আমাদের দেশের মানুষরা এখন সচেতন হচ্ছেন এবং তারা নার্সিং পেশার গুরুত্ব বুঝতে শুরু করেছেন।
বি:দ্র: আমাদের দেশে প্রয়োজনের থেকে অনেক কম নার্স রয়েছে। যেখানে তিন জন রোগীর জন্য একজন নার্স প্রয়োজন সেখানে আমাদের দেশে একজন নার্স একা একশ রোগীর সেবা প্রদান করেন।